CULLA, DULLA, RULLA….. নামগুলো সুন্দর না? এ রকম কয়েক ডজন ওলা-মুলা আছে। এগুলো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ভিত্তিক সংগঠন নতুন কিছু নয়, খারাপও নয়! তবে আইনের এই ওলা-মুলা ক্ষেত্র বিশেষে বিপজ্জনক হতে পারে বিধায় জনস্বার্থে বিষয়টা নিয়ে লিখতেই হচ্ছে। আজ শুধু লিখছি, ভবিষ্যতে হয়তো সংবাদ সংবাদ সম্মেলন করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং প্রয়োজনে এগুলো বিলুপ্ত করার জন্য আমি আইনী পদক্ষেপও নিতে পারি।
কেন এই সংগঠনগুলো রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে?
[এই প্রশ্নের উত্তরে যা যা লিখবো তা কুলা’র সাবেক সদস্য হিসেবে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার ভিত্তিতে, তথ্য ও সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে লিখবো। সুতরাং অন্যান্য সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রে আমার পর্যবেক্ষণ ও মতামত পুরোপুরি নাও মিলতে পারে]
রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটি হলো বিচারবিভাগ। এই বিচারবিভাগের সাথে বিচারক, আইনজীবী বা অন্যান্য পদে যারা সংযুক্ত তারা সবাই আইনের শিক্ষার্থী। এখন এলএলএম এসোসিয়েশনের নামে বিচারক ও আইনজীবীগণ যদি একই আম্ব্রেলার নিচে সামাজিক সম্পর্ক তৈরী করেন তাহলে রাষ্ট্রের বিচারকাজ ও বিচারবিভাগ দু’টোই কলুসিত হবার প্রকট সম্ভাবনা থাকে। এমনও দেখা গিয়েছে এইসব সংগঠনে সভাপতি ও সেক্রেটারি পদ দু’টোর একটা বিচারক এলুমনি, আরকেটা আইনজীবী এলুমনির জন্য অলিখিত বরাদ্দ থাকে! নির্বাচন হয় বটে! একজন বিচারক যখন এইসব সংগঠনের পদে আসেন, তখন আগের দিন সন্ধ্যায় ক্লাবে যে দশ জন আইনজীবীর সাথে চা-পান করলেন, একে-অপরের পীঠ চাপড়িয়ে আড্ডা মারলেন, পরের দিন সকালে এজলাসে উঠেই হয়তো সেই দশ জনের মামলা শুনবেন! যতই সৎ ও সচেতন থাকুন, মানুষ তো! সব মামলাতেই কি নির্মূহ নিরপেক্ষ বিচারকসুলভ আচরন করা সম্ভব হবে? সন্ধ্যায় তো আবার দেখা হবে!
আবার যারা আইনজীবী হিসেবে এইসব ওলা-মুলাতে নেতৃত্ব দেন তাদের পাওয়ার, পাখাল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় অধিকাংশই ডাক-সাইটে দালাল, তদবিরবাজ! এরা ভালো কেনা-বেচার উস্তাদ! ভালো বিচারকগণ এদের ফাঁদে পরে হয় চরিত্র হারান, না হয় চাকরি হারান! সব মিলিয়ে বিচারবিভাগে ঘুষ-ঘাস নিয়ে যে বদনাম আছে তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলার পেছনে এই সংগঠনগুলোর ভূমিকা কম নয়। অর্থনীতির সাবেক শিক্ষার্থীদের সমিতি আর আইনের সাবেক শিক্ষার্থীদের সমিতির মাঝে পার্থক্য আছে! এই দু’টো সমিতি রাষ্ট্রের কাঠামোর উপর একই রকম প্রভাব ফেলে না! আইন সমিতি বা এই ওলা-মুলা সংবেদনশীল বিচারবিভাগের স্বকীয়তা, গাম্ভীর্য ও সততা চর্চার প্রতি বিরাট হুমকী বলে আমি মনে করতে চাই।
দ্বিতীয়ত, এই সব সংগঠনগুলোকে অনেকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক লোভনীয় পদে আরোহনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এই সংগঠনগুলোও তাদের জন্য বুস্টার ও লবিস্ট হিসেবে কাজ করে। আমার সাথে দুই-তিন হাজার আইনজীবী আছে- এই পাওয়ার যেমন কিছু বিচারক ব্যবহার করে বিচারাঙ্গণে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন, তেমনি বিচারবিভাগের এক-তৃতীয়াংশ বিচারক আমার ওলার সদস্য- এইটা ব্যবহার করে কিছু আইনজীবীও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন। এমনই অশোভন চর্চা চালু রেখেছে ওলা-মুলা বাবুরা!
তৃতীয়ত, ওলা-মুলা নিবন্ধিত না হওয়ায় এদের কর্মকান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে মনিটরিং এর বাহিরে থাকে। কোন ধরণের স্বচ্ছতা ও জবাবদীহিতার বালাই নেই। এরা বিভিন্ন বারের ইলেকশনের আগে আগে পিকনিক আয়োজন করে এবং এলুমনিদের সরাসরি সেল করে ক্যান্ডিডেটদের কাছে! আসলে এই পিকনিকগুলো হলো মার্কেট প্লেস! এখানে আগের বছরের দেনা-পাওনা শোধ হয়, নতুন বছরের জেন্টলম্যান এগ্রিমেন্ট রিনিও করা হয় এবং ”অন্যান্য এগ্রিমেন্ট” ও “বিনিময় চুক্তি” মুখে মুখে আলাপে আলাপে ড্রাফট হয়! আমার ওলার একটা পিকনিকে গিয়ে আমি দেখেছি বারের নির্বাচনের ভোট প্রার্থী ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গ হিসেবে আগত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের ভীরে প্রকৃত এলুমনিদের ত্রাহিমধূসুদন অবস্থা!
ওলা-মুলার নেতা-নেত্রীগণ কি টাকায় বা ডেনেশনের বিনিময়ে আমাদের তথা এলুমনিদের বিক্রী করে, না-কি পরের বার নিজে যাতে বার ইলেকশনে প্রার্থী হতে পারে সেই গ্যারান্টির বিনিময়ে বিক্রী করে, না-কি বর্তমান পদের চেয়ে লাভজনক বড় পদের বিনিময়ে বিক্রী করে সেটা আমি জানি না। তবে আমরা বিক্রী হই!
আমি আমার ওলাকে একবার জবাবদীহিতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। বিশেষ করে গ্রুপে সাম্প্রদায়িক পোস্ট দেয়ার বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাকে এই আওয়ামী লীগ আমলেই গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করার হুমকী দেয়া হয়েছিল। শুনেছি কয়েকজন ইতমধ্যে বহিষ্কৃত হয়েছে! অথচ, ওই ওলা-মুলায় আওয়ামী লীগের ও অঙ্গ সঙ্গঠনের কেন্দ্রীয় পদাধীকারী, সুপ্রীমকোর্ট বারের কার্যকরি সদস্য ও পোর্টফোলিও হোল্ডার কয়েক জন, এবং আরও পড় পদ প্রত্যাশীর সংখ্যা অসংখ্য! আমার প্রতি এমন অশোভন আচরণ কারও মাথা ব্যাথা সৃষ্টি করেনি! কারন স্টেটাস কো বজায় রেখে পাতিয়ে খেলে এগুতে সমস্যা কি? জীবনে কোনো দিন অপজিশনের লোকেরা পজিশনে আসলে এই পাতিয়ে চলার সংস্কৃতি কাজে আসতেও পারে!
প্রাচীনকালে কাউকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলে সমাজচূত করা হতো। কারন সেই সময় দলবদ্ধভাবে না বসবাস করলে জন্তু জানোয়ারের থাবা থেকে বাঁচার সম্ভাবনা কম ছিলো। আমাদের দন্ডবিধি মোতাবেক এখন আনলফুল রেসট্রেন্ট বা কনফাইনমেন্ট দু’টোই দন্ডনীয় অপরাধ। তবুও প্রায় শুনি অমুক গ্রামে সালিস ডেকে কোনো এক মূর্খ ইউপি মেম্বার কোনো একটা পরিবার কে সমাজচ্যুত করেছে! মূর্খ মেম্বার কামডা করলেও আমার মাথায় কোনোভাবে আসে না একটা আইনজ্ঞদের সংগঠন, বিচারক, আইনজীবীতে ঠাসা একটা সংগঠন কিভাবে এই ধরণের অবৈধ সমাজচূত করার অসভ্য সংস্কৃতি চর্চা করতে পারে। তারা এটি করে শাস্তি হিসেবে শিক্ষা দেবার জন্য। কিন্তু, এক্সট্রা জুডিশিয়াল পানিশমেন্ট বা বিচারবহির্ভূত দন্ডারোপ দন্ডনীয় অপরাধ! শুধু তাই না, মহামান্য উচ্চ আদালত এই ব্যাপারে ফতোয়া সংক্রান্ত একটা মামলায় বিশাল একটা রায় লিখে বিচার বহির্ভূত শাস্তি নিষিদ্ধ করে বসে আছেন প্রায় এক যুগ আগে থেকে! হায় কপাল! আমাদের এলএলএম সাহেবরা তবুও অবাধে চালাচ্ছেন এই সমাজচ্যুুতির সাজা! যদি প্রশ্নকরি আন্ডার হুইচ অথরিটি তারা এই কাজ করছেন? ধরে নেবেন আরও বড় শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে! কারন, এইটা খণি, এইটা মাইট, এইটা আলাদীনের চেরাগ! এগলা রক্ষায় জাতি-গোষ্ঠী নিমিষে একাকার হয়ে ফাটিয়ে দেবে প্রশ্নকারীকে!
সবচেয়ে বড় কথা, এই ওলা-মুলা জামাত-শিবির ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের পুনর্বাসনের একটা উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে খুব ভালো কাজ করছে, অন্তত কয়েকটা উদাহরণ আমি দিতে পারব। অনেক ক্ষেত্রে সভাপতি সেক্রেটারি পদগুলো দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে ভাগাভাগি করে নিয়ে দেশদ্রোহী শক্তিকে এখনো পুষ্টি যুগিয়ে যাচ্ছে কোনো কোনো ওলা-মুলা। কিছুটা গোপনে গাপনে চলছে এই বাংলাদেশ ইসলামী আওয়ামী লীগের ভাই-ভ্রাদারের পাতানো খেলা!
আমি আমার কনসার্ন আমার ব্যাচমেট, সিনিয়র ও অনুজ ভাই-বোনদের অনেককে জানিয়েছি। প্রায় সবাই নির্লিপ্ত। হয়তো স্ত্রোতের বিপরীতে গিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না।
আমি তো আলেপ চাচা! আমাকে তো ঝুঁকি নিতেই হবে। তাই প্রসঙ্গটা নিয়ে শুরু করলাম। আলেপ চাচারা মরে, জেল খাটে কিন্তু লটকাই ছাড়ে যারে ধরে!
Leave a Reply